শখের মৃৎশিল্প- ৫ম শ্রেণির বাংলা
শখের মৃৎশিল্প
৫ম শ্রেণি
০১। সঠিক শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর ।
ক. এই যে _____ দেখছ, এসবই গ্রামের শিল্পীদের তৈরি।
খ. মাটির পুতুল জমানো আমার একটি _____ ।
গ. মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে _____ বলে।
ঘ. আমরা মেলা থেকে অনেক _____ কিনলাম।
ঙ. নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই _____ ।
চ. _____ সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে মাটির জিনিস।
ছ. _____ মাটি তেমন আঠালো নয়।
জ. মেলার একটু কাছে পৌছতেই, শুনতে পেলাম _____ ক্যাঁচর ক্যাচর শব্দ।
ঝ. গ্রামের শিল্পীরা রং তৈরি করেন শিম, _____ পাতার রস, কাঁঠাল গাছের বাকল থেকে।
ঞ. অনেক যত্ন আর শ্রম দিয়ে মাটির _____ তৈরি করতে হয়।
ট. আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে _____ ।
০২। রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখ ।
(ক) কুমারেরা কী তৈরি করেন? তোমার দেখা একটি মৃৎশিল্প সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: কুমারেরা মাটির শিল্পকর্ম তৈরি করেন। আমার দেখা একটি মৃৎশিল্প হলো টেপা পুতুল।
নরম এঁটেল মাটি টিপে টিপে যে পুতুল বানানো হয় তাকে টেপা পুতুল বলে। টিপে টিপে
বানানো হয় বলেই এর নাম টেপা পুতুল।
(খ) কুমারপাড়ায়
গিয়ে 'শখের
মৃৎশিল্প' গল্পের গল্পকথক ও তার সঙ্গীরা কী দেখল?
উত্তর: 'শখের মৃৎশিল্প' গল্পের গল্পকথক ও তার সঙ্গীরা কুমারপাড়ায় গিয়ে সবাইকে
ব্যস্ত দেখতে পায়। কেউ মাটির তাল চাক করে সাজিয়ে রাখছেন। কেউবা কাঠের চাকায় মাটি
লাগিয়ে নানা আকারের পাত্র বানাচ্ছেন। কেউবা এগুলো সারি সারি করে শুকোতে দিচ্ছেন
রোদে। পাশেই মাটির জিনিস পোড়ানোর জন্য উঁচু ছোট্ট ঢিবির মতো চুলা থেকে ধোঁয়া বের
হচ্ছে। সেখান থেকে মাটির পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও কাজ করছে।
(গ) শিল্পকলা কী? দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্পের বর্ণনা
দাও।
উত্তর: যখন কোনো কিছু সুন্দর করে আঁকা বা বানানো হয় তখন তা হয় শিল্প। শিল্পের এ কাজকে
বলে শিল্পকলা। আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মাটির শিল্প। এ দেশের
কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে মাটির জিনিস। যেমন- কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসনকোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা, পিঠে তৈরির নানা
ছাঁচ, খেলনা, টেপা পুতুল, ঘোড়া, হাতি, ছোট কলস বা
তৈজসপত্র। মাটির তৈরি এসব শিল্পকর্মকে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প বলা হয়। এ শিল্পের
প্রধান উপকরণ হলো মাটি।
(ঘ) গল্পকথক তার মামার
সাথে মেলা থেকে কী কী কিনেছিল?
উত্তর: 'শখের মৃৎশিল্প' রচনায় গল্পকথক তার মামার সাথে মেলায় ঘুরতে যায়। সেখানে গিয়ে
বিভিন্ন কিছু দেখে এবং কেনে। গল্পকথক মামার সাথে মেলা থেকে প্রথমে দুটি শখের হাঁড়ি
কিনেছিল। এরপর একটি মাটির ইলিশ কিনেছিল। তারা অনেক টেপা পুতুল, ঘোড়া, হাতি ও ছোট কলম কিনেছিল। শেষে মেলা থেকে তারা কদমা, বাতাসা, মুড়কি ও খই কিনে শখের হাঁড়ি ভর্তি করে বাড়ি ফিরেছিল।
(ঙ) 'শখের মৃৎশিল্প' গল্প অনুযায়ী বৈশাখী মেলার বর্ণনা দাও।
উত্তর: 'শখের মৃৎশিল্প' গল্প অনুযায়ী বৈশাখী মেলাটি ছিল নিম্নরূপ:
মেলার একটু
কাছে পৌছতেই শোনা যায় নাগরদোলার ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ। মেলার ভেতরে দেখা যায় বাঁশের তৈরি কুলো, ডালা, ঝুড়ি, চালুন, মাছ ধরার চাঁই, খালুইসহ আরও অনেক কিছু। মেলায় বসেছে বাঙি, তরমুজ, মুড়ি-মুড়কি, জিলাপি আর বাতাসার সারি সারি দোকান। আরেকটু এগিয়ে গেলে দেখা
যায়, নানা রঙের, নানা বর্ণের বিচিত্র সব মাটির হাঁড়ি। তাছাড়াও
মেলায় মাটির ঘোড়া, হাতি, ষাঁড় এবং নানা
আকারের মাটির পুতুল দেখা যায়। দেখা যায় শখের হাঁড়ি, মাটির তৈরি ইলিশ ও নানা প্রকার টেপা পুতুল।
০৩। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লেখ ।
(ক) মাটির
শিল্প বলতে কী বুঝি?
উত্তর: মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলে মাটির শিল্প বা
মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। মাটির শিল্প এঁটেল মাটির সাহায্যে
অনেক যত্ন আর শ্রম দিয়ে তৈরি শিল্প। যেমন- শখের হাঁড়ি।
(খ) বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকর্ম কোনটি?
উত্তর: যখন কোনো কিছু সুন্দর করে আঁকানো বা বানানো অথবা গাওয়া হয়
তখন তা হয় শিল্প। আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মাটির শিল্প।
বাংলাদেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে এই শিল্প।
(গ) শখের হাঁড়ি কী রকম?
উত্তর: শখ করে পছন্দের জিনিস যেসব সুন্দর হাঁড়িতে রাখা হয়, সেগুলোর নাম শখের হাঁড়ি। শখের হাঁড়িতে রয়েছে
বৈচিত্র্য। এগুলো অনেক রঙে এবং অনেক বর্ণে সাজানো মাটির হাঁড়ি। ফুল, পাতা, মাছের অপূর্ব ছবি আঁকা হয় সেই হাঁড়িতে।
(ঘ) টেপা পুতুল কী? বর্ণনা কর।
উত্তর: টেপা পুতুল হচ্ছে মাটি দিয়ে তৈরি পুতুল। নরম এঁটেল মাটি
টিপে টিপে এসব পুতুল বানানো হয়। বর-কনে, কৃষক, নথপরা ছোট মেয়ে ইত্যাদি নানা রকম আকৃতিতে টেপা পুতুল বানানো হয়।
(ঙ) মৃৎশিল্পের কারিগর কারা? এ শিল্পের উপকরণ সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: মৃৎশিল্পের কারিগর হলো কুমার সম্প্রদায়। এ শিল্পের প্রধান
উপকরণ হলো মাটি। পরিষ্কার এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি হয় মাটির শিল্প। আঠালো নয় এমন
দোআঁশ মাটি বা ঝরঝরে বেলে মাটি দিয়ে এ শিল্প হয় না।
(চ) মৃৎশিল্প তৈরির জন্য কোন ধরনের মাটি প্রয়োজন হয় এবং কেন
অন্য ধরনের মাটি দিয়ে হয় না?
উত্তর: মৃৎশিল্প তৈরির জন্য পরিষ্কার এঁটেল মাটি প্রয়োজন। কারণ
এঁটের মাটি আঠালো। আঠালো নয় এমন মাটি দিয়ে মাটির জিনিস তৈরি করা যায় না। দোআঁশ
মাটি তেমন আঠালো নয়, আবার বেলে মাটিও ঝরঝরে। তাই এগুলো দিয়ে মাটির শিল্প হয় না।
(ছ) মাটির শিল্প কেন আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়?
উত্তর: মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয় কারণ হাজার বছর
ধরে মৃৎশিল্প বাঙালি জীবনের সাথে মিলেমিশে আছে। শুধু তা-ই নয়, মাটির শিল্পের সৌন্দর্য অতীতকাল থেকে শুরু করে আজ
পর্যন্ত বাঙালিকে আনন্দ দিচ্ছে। টেরাকোটাগুলো মৃৎশিল্পের প্রাচীন নিদর্শন। আজকাল
সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নানা রকম নকশা করা মাটির ফলক ব্যবহৃত হচ্ছে।
(জ) বাংলাদেশের কোথায় পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর: পোড়ামাটির ফলক বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্প। টেরাকোটা বা
পোড়ামাটির এসব কাজ এ দেশে শুরু হয়েছে হাজার বছর আগে। বাংলাদেশের শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দিরে এই
টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায়।
(ঝ) টেরাকোটা কী?
উত্তর: হাঁড়ি, কলসি ছাড়াও আমাদের দেশে একসময় টেরাকোটার কাজ হতো। টেরাকোটা হলো পোড়ামাটির ফলক।
নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে টেরাকোটা তৈরি করা হতো। ছোট ছোট ফলককে
পাশাপাশি জোড়া দিয়ে বড় করা যায়। টেরাকোটা বা পোড়ামাটির এসব কাজ এ দেশে শুরু হয়েছে
হাজার বছর আগে।
(ঞ) কয়েকটি মৃৎশিল্পের নাম বলি।
উত্তর: মাটির তৈরি শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের মধ্যে আছে-
শখের হাঁড়ি, টেপা পুতুল, কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসনকোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা, পিঠা তৈরির নানা ছাঁচ, টেরাকোটা ইত্যাদি।
(ট) বৈশাখী মেলায় কী কী পাওয়া যায়?
উত্তর: বৈশাখ মাসের প্রথম দিন বৈশাখী মেলা বসে। সেই মেলায় হরেক
রকমের জিনিস পাওয়া যায়। যেমন- বাঁশের তৈরি কুলো, ডালা, ঝুড়ি, চালুন, মাছ ধরার চাঁই, খালুই ইত্যাদি। দোকানে দোকানে পাওয়া যায় বাঙি, তরমুজ, মুড়ি-মুড়কি, জিলাপি আর বাতাসা। মাটির তৈরি জিনিসপত্রও মেলার অনেক বড়
আকর্ষণ। মাটির তৈরি জিনিসের মধ্যে শখের হাঁড়ি, মাটির ঘোড়া, হাতি, ষাঁড় আর নানা আকারের মাটির পুতুল পাওয়া যায়।
(ঠ) কুমারপাড়া বলতে কী বোঝ? দুটি বাক্যে লেখ।
উত্তর: যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র 'তৈরি করেন তাদের কুমার বলে। কয়েকঘর কুমার যেখানে
একত্র বসবাস করে তাকে কুমারপাড়া বলে।
(ড) মাটির শিল্পের সুন্দর নকশা, রং গ্রামের শিল্পীরা কী দিয়ে বা
কীভাবে তৈরি করেন?
উত্তর: মাটির শিল্পের সুন্দর নকশাগুলো তারা মন থেকে আঁকেন। আর রং
তৈরি করেন শিম, সেগুন পাতার রস, কাঁঠাল গাছের বাকল থেকে। তবে আজকাল বাজার থেকে
কেনা রংও লাগানো হয়।
(ঢ) কাদের কাছে মাটির শিল্প তৈরি করা সহজ এবং কেন?
কুমারদের
কাছে মাটির শিল্প তৈরি করা খুব সহজ। অনেক যত্ন আর শ্রম দিয়ে মাটির শিল্পকর্ম তৈরি
করতে হয়। কিন্তু কুমারদের কাছে এসব সহজ, কেননা তারা বংশপরম্পরায় এ কাজ করে আসছে।
০৪। শব্দের অর্থ লেখ ।
প্রদত্ত শব্দ |
শব্দার্থ |
শখ |
মনের ইচ্ছা |
টেপা পুতুল |
কুমাররা নরম এঁটেল মাটির চাক হাতে নিয়ে টিপে টিপে নানা
ধরনের ও নানা আকারের পুতুল তৈরি করেন। টিপে টিপে তৈরি করা হয় বলে এসব পুতুলের
নাম টেপা পুতুল। |
নকশা |
রেখা দিয়ে আঁকা ছবি |
টেরাকোটা |
'টেরা' অর্থ মাটি,
আর 'কোটা' অর্থ
পোড়ানো। পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সব রকমের জিনিস টেরাকোটা "হিসেবে
পরিচিত। |
মৃৎশিল্প |
মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে আমরা বলি মাটির শিল্প বা
মৃৎশিল্প। আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প । |
শখের হাঁড়ি |
শখ করে পছন্দের জিনিস যে সুন্দর হাঁড়িতে রাখা হয়, তার নাম শখের হাঁড়ি। |
বসতবাড়ি |
যে বাড়িতে বাস করা হয়, বাসস্থান, আবাস। |
বাকল |
গাছের ছাল। |
শিল্পকর্ম |
কারুকার্য। |
পরম্পরা |
ধারা, পর্যায়, অনুক্রম। |
ছাঁচ |
নকশা করা ভেতরের পিঠবিশিষ্ট ফাঁপা পাত্র (যাতে গলিত
পদার্থ ঢেলে নকশার রূপ দেওয়া হয়।), ধরন, আদল। |
প্রান্ত |
সীমা, কিনারা। |
রঙ-তুলি |
ছবি আঁকার রং ও তুলি। |
০৫। শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন কর ।
শব্দ |
বাক্য |
বাকল |
অর্জুন গাছের বাকল মানুষের জন্য অনেক উপকারী। |
প্রান্তে |
মাঠের ওই প্রান্তে তাদের বাড়ি। |
টেরাকোটা |
নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো
টেরাকোটা। |
মুড়ি-মুড়কি |
মেলায় প্রচুর মুড়ি-মুড়কির দোকান বসেছে। |
নকশা |
মৃৎশিল্পীর নকশাগুলো কুমোররা মন থেকে আঁকেন। |
শখের হাঁড়ি |
আমাদের শখের হাঁড়ি তিনটি মা শিকায় তুলে রেখেছেন। |
পরম্পরা |
কুমোররা বংশপরম্পরায় মাটির জিনিস তৈরি করেন। |
০৬। ক্রিয়াপদের চলিত রূপ লেখ ।
ক্রিয়াপদ |
চলিত রূপ |
আসিতেছেন |
আসছেন |
পৌছাইতে |
পৌঁছাতে |
দেখাইতে |
দেখাতে |
রাখিতেছেন |
রাখছেন |
সাজাইয়া |
সাজিয়ে |
ফিরিলাম |
ফিরলাম |
কিনিয়া |
কিনে |
কোন মন্তব্য নেই