সবার আমি ছাত্র- ৫ম শ্রেণির বাংলা
সবার আমি ছাত্র
৫ম শ্রেণি
(১) কবি ও কবিতার নামসহ 'সবার আমি ছাত্র' কবিতার প্রথম ৮ লাইন লেখ
সবার আমি ছাত্র
সুনির্মল বসু
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাই রে।
পাহাড় শিখায় তাহার সমান-
হই যেন ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে-.
দিল-খোলা হই তাই রে।
(২) সঠিক শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর ।
ক. নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি ______।
খ. মাটির কাছে ______ পেলাম আমি শিক্ষা।
গ. ______
হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাই রে।
ঘ. পাহাড় শিখায় তাহার সমান, হই যেন ভাই ______।
ঙ. ______
মাঠের উপদেশে, দিল-খোলা হই তাই রে।
উত্তর: (ক) দিবারাত্র (খ) সহিষ্ণুতা (গ) কর্মী (ঘ)
মৌন-মহান (ঙ) খোলা।
(৩) রচনামূলক প্রশ্নের
উত্তর লেখ ।
(ক) আকাশ আমাদের কী
শিক্ষা দেয়? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: আকাশ তার অসীমতা দিয়ে উদার হতে শিক্ষা দেয়। 'সবার আমি ছাত্র' কবিতায় কবি সুনির্মল বসু বলেছেন, আকাশ তাঁকে উদার হতে শেখায়। মানুষ মূলত প্রকৃতি
থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রকৃতিই মানুষের প্রকৃত শিক্ষক। আকাশ প্রকৃতির উপাদান।
মাথার উপর যে আকাশ বিশালতা অনেক। অসীম আকাশ মানুষকে তার মতোই অসীম ও উদার হতে
শেখায়। তাই উদারতার শিক্ষা মানুষ আকাশের কাছ থেকেই পায়।
(খ) খোলা মাঠের
উপদেশে কবি কী শুনতে চান?
উত্তর: কবি খোলা মাঠের উপদেশে কান
পেতে চান দিল-খোলা হওয়ার জন্য। কবি খোলা মাঠের মতো দিল-খোলা অর্থাৎ মন খোলা হতে
সবাইকে উপদেশ দেন। প্রকৃতির খোলা মাঠ ও পৃথিবী এক অনন্য অনুজ্ঞা। খোলা মাঠের
উদারতা মানুষকে মন খোলা বা মুক্তমনা হওয়ার উপদেশ দেয়। কেননা মাঠ প্রশস্ততার প্রতীক।
খোলা মাঠে আমরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারি। তাই কবি খোলা মাঠের কাছ থেকে
দিল-খোলা হওয়ার শিক্ষা পেতে চান।
(গ) বায়ু কীভাবে
কবিকে কর্মী হওয়ার মন্ত্র দেয়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বায়ু তার গতি ও কাজের
চলমানতার মধ্য দিয়ে কবিকে কর্মী হওয়ার মন্ত্র দেয়। বায়ু বা বাতাস প্রকৃতির
একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বায়ু গতিশীল। বায়ু সর্বদা প্রবাহিত হয়। কখনো থেমে
থাকে না। সব সময় বায়ু তার কাজ করে। সব সময় কাজ করার মন্ত্রণা বা উৎসাহ কবি বায়ুর
কাছ থেকে পান। বায়ু কর্মপ্রেরণার একটি বড় উৎস। কবি তাই বায়ুর কাছে কর্মী হওয়ার
মন্ত্র পান।
(ঘ) সূর্য কীভাবে
আমাদের আপন তেজে জ্বলতে শিক্ষা দেয়?
উত্তর: সূর্য নিজে জ্বলে আমাদের আপন
তেজে জ্বলতে শিক্ষা দেয়। পৃথিবীর প্রতিটি অনুষ্কা থেকে আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা
গ্রহণ করি। সূর্যের কাছ থেকে আমরা আপন তেজে জ্বলতে শিখি। প্রত্যেকের নিজের ভেতরের
শক্তিকে জাগিয়ে তোলার জন্য সূর্যের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সূর্যের মতো
আমাদের নিজেদের আলোতে সবাইকে আলোকিত করতে হবে। এভাবেই আপন তেজে জ্বলে অন্যের
উপকারে আত্মোৎসর্গ করার শিক্ষা সূর্য আমাদের দেয়।
(ঙ) পাহাড় কবিকে মৌন ও
মহান হতে শিক্ষা দেয় কীভাবে?
উত্তর: সমাজে অনেক মানুষ আছে, যারা একট কাজ করে আর একট বাড়িয়ে বলে। তবে পাহাড়
এই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে, কিন্তু কখনো বড় কথা বলে নিজেকে জাহির করে না। কবি নীরবে মহান ও উদার হয়ে কাজ
করার উৎসাহ পাহাড়ের কাছ থেকে পান। এছাড়া কবি মাথা উঁচু করে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্নও
পাহাড়কে দেখে শোনেন। ধৈর্য-ধৈর্যের কবি পাহাড়ের মতো নীরব ও গুণে-কর্মে পাহাড়ের মতো
মহান হতে চান। সেই শিক্ষা তিনি পাহাড়ের কাছ থেকে অর্জন করেন। এভাবেই পাহাড় কবিকে
মৌন ও মহান হতে শিক্ষা দেয়।
(চ) 'সবার আমি ছাত্র' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: 'সবার আমি
ছাত্র' বলতে কবি নিজেকে এই
পৃথিবীর সবকিছুর ছাত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মানুষ যখন জন্মলাভ করে তখন সে কোনো
কিছু সম্পর্কেই জ্ঞান রাখে না। ধীরে ধীরে মানুষ বড় হয় আর প্রকৃতি ও পরিবার থেকে
শিক্ষা লাভ করতে থাকে। মানবিক ও নৈতিকতার শিক্ষাও মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে পায়।
কবিও প্রকৃতির আকাশ, পাহাড়, নদী, সূর্য, সবুজ বন, চাঁদ, মাটি সব উপাদান
থেকে শিক্ষা লাভ করেন। প্রকৃতির এসব উপাদানের মধ্যে কবিকে কোনোটি উদার, কোনোটি মহৎ, কোনোটি কর্মী, কোনোটি বেগবান, কোনোটি সহিষ্ণু হওয়ার শিক্ষা দান করে। তাই কবি নিজেকে সবার
ছাত্র মনে করেন।
(ছ) "এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বিশাল পৃথিবীর মাঝে ছড়িয়ে
থাকা জ্ঞানের সমাহারকে বিরাট খাতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বিরাট এ পৃথিবী মানুষের
আবাসস্থল। পৃথিবীর চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানা রকমের জ্ঞান। মানুষ প্রতিনিয়ত শিক্ষা
গ্রহণ করে তার চারপাশ থেকে। প্রকৃতি, নদী-নালা, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, আকাশ-বাতাস, চাঁদ-সূর্য ইত্যাদি যেন প্রতিনিয়ত নিজেদের চলার নিয়মে
আমাদেরকে নানা শিক্ষা দেয়। প্রকৃতির এই উপাদানগুলো প্রতিনিয়ত যেমন দিচ্ছে নানা
রকমের শিক্ষা, তেমনই এর পরিসরও
অনেক বড়। বিশাল, বিস্তৃত ও জ্ঞানের
আধার পৃথিবীর এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোকে তুলনা করা হয়েছে বিরাট খাতার সঙ্গে।
(জ) "পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়"- চরণটিতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: "পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়"- চরণটিতে কবি প্রকৃতিকে পাতা হিসেবে কল্পনা করেছেন, যেখানে শিক্ষার সব বিষয় রয়েছে। করির কাছে এই পৃথিবী একটি বিরাট খাতা। সেই খাতার পাতায় পাতায় রয়েছে শিক্ষার নানা বিষয়। প্রকৃতির মাঝেই নানা বিষয়ের জ্ঞান রয়েছে, যা কবি কৌতূহল নিয়ে শিখছেন। কবি এই পৃথিবীকে বিরাট খাতা বলার মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন- এই পৃথিবী জ্ঞানের আধার, যার পাতায় পাতায় বিভিন্ন জ্ঞানের সমাবেশ ঘটেছে।
০৪। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লেখ ।
(ক) আকাশ, বায়ু ও পাহাড় আমাদের কী শিক্ষা
দেয়?
উত্তর: আকাশ আমাদের উদার হতে শিক্ষা দেয়, বায়ু আমাদের কর্মী হওয়ার শিক্ষা দেয় আর পাহাড়
শেখায় তার মতো মৌন-মহান হতে।
(খ) খোলা মাঠ কী উপদেশ
দেয়?
উত্তর: খোলা মাঠ দিল-খোলা হওয়ার উপদেশ দেয়।
(গ) সূর্য ও চাঁদ
আমাদের কী শেখায়?
উত্তর: সূর্য আমাদের আপন তেজে জ্বলবার শিক্ষা দেয় আর চাঁদ হাসতে ও
মধুর কথা বলতে শেখায়।
(ঘ) মাটি কীভাবে
আমাদের সহিষ্ণুতা শিক্ষা দেয়?
উত্তর: মাটির উপর দিয়ে দিনের পর দিন আমরা প্রতিনিয়ত চলাচল করি, মাটিকে কাটি, আবার চাষ করি, বড়ো বড়ো ঘর, উঁচু উঁচু দালান বানাই। তবুও মাটি সবকিছু ধৈর্য ধরে সহ্য
করে। এভাবেই মাটি আমাদের সহিষ্ণুতা শিক্ষা দেয়।
(ঙ) সাগর ও নদী আমাদের
কী শেখায়?
উত্তর: সাগর আমাদের বিশাল অন্তরের অধিকারী হতে শিক্ষা দেয়, আর নদী আমাদের দ্রুত বেগে ছুটতে শেখায়।
(চ) ‘বিশ্বরূপা পাঠশালা মোর’ এ কথার অর্থ কী?
উত্তর: ‘বিশ্বরূপা পাঠশালা মোর’ - চরণটি
দ্বারা কবি সমস্ত পৃথিবীটাকে শিক্ষার অন্যতম স্থান হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন। কবি
‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতায় পৃথিবীকে এক বিশাল শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
কারণ পৃথিবীর প্রতিটি অনুঘটনা থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। আকাশ, বাতাস, ঝরনা, মাটি, চাঁদ, সূর্য ইত্যাদি থেকে প্রতিনিয়ত আমরা শিক্ষা গ্রহণ
করি। পৃথিবীতে ছড়ানো শিক্ষার এই আধার দেখেই কবি পৃথিবীজুড়েই তাঁর পাঠশালা বলে উক্ত
চরণে উল্লেখ করেছেন।
(ছ) চাঁদ কীভাবে
আমাদের হাসতে শেখায়?
উত্তর: চাঁদ প্রকৃতির খুবই সুন্দর একটি উপাদান। এটি সৌন্দর্যের
প্রতীক। চাঁদের এই সুন্দর রূপ যেন হাসিমুখকেই নির্দেশ করে। তাই মানুষ চাঁদকে দেখে
হাসতে শেখে।
(জ) চাঁদ কীভাবে
আমাদের মধুর কথা বলতে শেখায়?
উত্তর: চাঁদের সুন্দর রূপ হাসিমাখা মুখের রূপকে ধারণ করে। ফলে মানুষ
চাঁদের কাছ থেকে সব সময় হাসিমুখে থাকার শিক্ষা পায়। আর মানুষ সব সময় হাসিমুখে
থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তার মুখ দিয়ে মধুর কথা বের হবে।
(ঝ) দিবারাত্র আমরা
কীভাবে নতুন জিনিস শিখছি?
উত্তর: মানুষ হিসেবে আমরা প্রতিদিন নানাভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হই।
প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জ্ঞান লাভ করছি। এভাবেই
আমরা নতুন জিনিস শিখছি।
(ঞ) প্রকৃতির শিক্ষা
কবির কাছে কৌতূহল জাগায় কেন?
আমাদের চারপাশের প্রকৃতির ক্ষেত্র
সত্যিকার অর্থেই খুব বিশাল। বিশাল এই প্রকৃতি নতুন রূপে প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে
এসে হাজির হয়। ফলে কবির মধ্যে কৌতূহলের জন্ম হয়।
(ট) প্রকৃতির শিক্ষায়
কেন কবির লেশমাত্র দ্বিধা নেই?
উত্তর: প্রকৃতি তার আপন নিয়ম মেনে সুশৃঙ্খলভাবে চলতে থাকে। তার এই
চলায় কোনো ত্রুটি নেই। এর প্রতিটি শিক্ষাই সুনির্ধারিত ও সত্য। তাই প্রকৃতির শিক্ষায় কবির
লেশমাত্র দ্বিধা নেই।
০৫। 'সবার আমি
ছাত্র' কবিতার
মূলভাব লেখ।
প্রকৃতির
কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বিশাল আকাশের দিকে আমরা যখন তাকাই, তখন তার কাছে শিক্ষা পাই উদারতার। তেমনিভাবে বায়ুর কাছে
শিক্ষা পাই কর্মী হওয়ার, পাহাড়ের কাছে শিক্ষা পাই মৌন-মহান
হওয়ার, খোলা মাঠের কাছে দিল-খোলা হওয়ার। সূর্যের কাছে শিখি
আপন তেজে দীপ্ত হতে, চাঁদের কাছে শিখি মধুরতা ও নম্রতা।
সাগরের কাছে শিখি বিশাল অন্তরের অধিকারী হতে, আর নদীর কাছে
শিখি দ্রুত বেগে ছুটতে। এমনিভাবে মাটি, পাথর, ঝরনা প্রভৃতির কাছ থেকেও আমাদের অনেক শেখার আছে। তাই এ বিশাল পৃথিবী
আমাদের শেখার ও জানার এক বিরাট পাঠশালা।
কোন মন্তব্য নেই