প্রাথমিক বিজ্ঞান।। ৫ম শ্রেণি।। শক্তি ও পদার্থ
শক্তি ও পদার্থ
প্রাথমিক বিজ্ঞান
৫ম শ্রেণি
বর্ণনামূলক প্রশ্ন
(ক) যখন টিভি চালানো হয় তখন শক্তির কী কী রূপান্তর ঘটে?
উত্তর: টিভি চালাতে বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হয়। টিভি চালানোর সময় এই বিদ্যুৎ শক্তির
বিভিন্ন ধরনের রূপান্তর ঘটে। এগুলো হলো-
১. টিভি
কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে বিদ্যুৎ শক্তির তাপ শক্তিতে রূপান্তর।
২. টিভির
পর্দা আলোকিত হয়ে বিদ্যুৎ শক্তির আলোক শক্তিতে রূপান্তর।
৩. টিভির
ভেতরের যন্ত্র দ্বারা বিদ্যুৎ শক্তির শব্দ শক্তিতে রূপান্তর।
(খ) ঠান্ডা পানির গ্লাস হাত দিয়ে ধরে রাখলে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়।
তোমার বন্ধু মনে করে গ্লাসের ঠান্ডা হাতে চলে যাওয়ার কারণে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়।
তার ধারণাটি কী সঠিক? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: না, আমার বন্ধুর ধারণা সঠিক নয়।
ব্যাখ্যা:
ঠান্ডা পানির গ্লাস হাত দিয়ে ধরে রাখলে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। এমনটা ঘটার কারণ
গ্লাসের ঠান্ডা হাতে চলে যাওয়া নয়। বরং হাতের তাপ গ্লাসে সঞ্চালিত হওয়ার ফলেই এ
ঘটনাটি ঘটে। কেননা তাপ সর্বদা উচ্চ তাপমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন তাপমাত্রার স্থানে
সঞ্চালিত হয়। এখানে ঠান্ডা পানির গ্লাস নিম্ন তাপমাত্রায় রয়েছে, আর হাত উচ্চ তাপমাত্রায়। তাই হাতের তাপ গ্লাসে
সঞ্চালিত হওয়ায় হাতের তাপমাত্রা কমে গিয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়। সুতরাং আমার বন্ধুর
ধারণাটি সঠিক নয়।
(গ) যখন হাঁড়িতে ভাত রান্না করা হয় তখন তাপ কীভাবে সঞ্চালিত হয়?
উত্তর: যখন হাঁড়িতে ভাত রান্না করা হয় তখন হাঁড়ির তলায় অর্থাৎ. নিচের অংশে তাপ
প্রয়োগ করা হয়। ফলে নিচের অংশের পানি গরম হয়ে প্রসারিত ও হালকা হয়ে উপরে উঠে আসে।
আর উপরের অংশের পানি ঠান্ডা ও ভারী হওয়ায় তা নিচে নেমে আসে। যা আবার গরম হয়ে উপরের
দিকে উঠে আসে। এভাবে হাঁড়ির সর্বত্র তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হওয়াকে
বলা হয় পরিচলন পদ্ধতি। অর্থাৎ হাঁড়িতে ভাত রান্না করার সময় তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে
সঞ্চালিত হয়।
(ঘ) বাড়ির আশপাশে বৃক্ষ রোপণ করে কীভাবে শক্তির সাশ্রয় করা যায়?
উত্তর: বাড়ির আশেপাশে বৃক্ষ থাকলে
সূর্যের তাপ সরাসরি বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। বৃক্ষ বাড়িকে ছায়ায় ঘিরে রাখে।
বাড়িতে সবসময় ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। ফলে বাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ার কুলার কিংবা এয়ার কন্ডিশন চালানোর প্রয়োজন হয় না। এতে
করে বিদ্যুৎ শক্তি সংরক্ষিত হয়। তাছাড়া বৃক্ষের ডালপালা ও পাতা রান্নার কাজে
জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাতে অনবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন- গ্যাস সংরক্ষিত
হয়। পরবর্তীতে তা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। এভাবেই বাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণ
করে শক্তির সাশ্রয় করা যায়।
(ঙ) শক্তি কী? শক্তির তিনটি উৎসের নাম লেখ। তুমি কীভাবে শক্তির অপচয় রোধ
করবে তার চারটি উপায় লেখ।
উত্তর: কোনো কিছু করার সামর্থ্যই
হলো শক্তি।
শক্তির
তিনটি উৎস হলো-
১. সূর্য,
২.
বায়ুপ্রবাহ ও
৩. পানির
স্রোত।
শক্তির অপচয়
রোধের চারটি উপায় হলো-
১.
ব্যবহারের পর বৈদ্যুতিক বাতি এবং যন্ত্রপাতিসমূহ বন্ধ রাখা।
২.
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ধরে ফ্রিজের দরজা খোলা না রাখা।
৩. বাড়িতে
ছায়ার ব্যবস্থা করার জন্য গাছ লাগানো।
৪. বাতি না
জ্বালিয়ে পর্দা সরিয়ে দিনের আলো ব্যবহার করা।
(চ) শক্তির রূপান্তর কী? শক্তির চারটি রূপের নাম লেখ। সৌরশক্তির চারটি ব্যবহার
উল্লেখ কর।
উত্তর: শক্তি এক রূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হতে পারে। শক্তির রূপের এই
পরিবর্তনই হলো শক্তির রূপান্তর। শক্তির চারটি রূপের নাম-
১. বিদ্যুৎ,
২. আলোক,
৩. শব্দ ও
৪. তাপ।
সৌরশক্তির
চারটি ব্যবহার নিম্নরূপ:
১. সৌরশক্তি
থেকে আমরা প্রত্যক্ষভাবে আলো ও তাপ পাই।
২.
সৌরশক্তির সাহায্যে উদ্ভিদ নিজের ও প্রাণীর জন্য খাদ্য তৈরি করে।
৩. সৌরশক্তি
ব্যবহার করে সৌরপ্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
৪.
সৌরশক্তির সাহায্যে রান্না করা যায়।
(ছ) শক্তির রূপান্তরের চারটি উদাহরণ লেখ। শক্তির সাশ্রয় জরুরি
কেন?
উত্তর: শক্তির রূপান্তরের চারটি উদাহরণ নিম্নরূপ-
১. যখন
উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে তখন সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
২. সৌর
প্যানেল সৌরশক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
৩. যখন আমরা
টেলিভিশন চালাই তখন বিদ্যুৎ শক্তি আলোক, তাপ এবং শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৪. কাঠ বা
কয়লা পোড়ালে রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
আমরা
প্রতিদিন নানা কাজে শক্তি ব্যবহার করি। তেল, কয়লা,
প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের উপরই আমরা বেশি নির্ভরশীল। এ সকল শক্তি ব্যবহারের ফলে নিঃশেষ হলে
তা আর সহজে তৈরি হয় না। এছাড়া শক্তির অপচয় পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। যা জলবায়ুর
উপরও প্রভাব ফেলে। তাই শক্তি সাশ্রয় অতীব জরুরি।
(জ) বিদ্যুৎ শক্তি কাকে বলে? টেলিভিশন দেখার সময় বিদ্যুৎ শক্তি
কোন কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়? বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় রোধে তুমি কী করবে? এ সম্পর্কে চারটি বাক্য লেখ।
উত্তর: টেলিভিশন দেখার সময় বিদ্যুৎ শক্তি আলোক এবং শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় রোধে আমি যা করব তা চারটি বাক্যে নিচে
লেখা হলো-
১.
ব্যবহারের পর বৈদ্যুতিক বাতি এবং যন্ত্রপাতিসমূহ বন্ধ রাখব।
২.
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ফ্রিজের দরজা খোলা রাখব না।
৩. বাড়িতে
ছায়ার ব্যবস্থা করার জন্য গাছ লাগাব।
৪. বাতি না
জ্বালিয়ে পর্দা সরিয়ে দিনের আলো ব্যবহার করব।
(ঝ) তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? তরল পদার্থের তাপ কীভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তা লেখ।
উত্তর: উচ্চ তাপমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন তাপমাত্রার স্থানে তাপের প্রবাহকে তাপ
সঞ্চালন বলে।
তরল
পদার্থের তাপ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা নিচে দেওয়া হলো-
১. তরল
পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়।
২. যখন আমরা
কোনো পানির পাত্রকে চুলায় গরম করি তখন এর নিচের অংশের পানি প্রথমে গরম হয়ে উপরে
উঠে আসে।
৩. আর
পাত্রের উপরের অংশের পানির তাপমাত্রা কম থাকায় তা নিচে নেমে আসে যা আবার গরম হয়ে
উপরের দিকে উঠে আসে।
এভাবেই তাপ
পাত্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
(ঞ) বিকিরণ কী? তাপ সঞ্চালনের তিনটি পদ্ধতি লেখ। শক্তি সংরক্ষণে তুমি কী
করবে চারটি বাক্যে লেখ।
উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় তাপ শক্তি কোনো মাধ্যম ছাড়াই উৎস থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তাই বিকিরণ।
তাপ সঞ্চালনের তিনটি পদ্ধতি হলো-
১. পরিবহন,
২. পরিচলন ও
৩. বিকিরণ।
শক্তি
সংরক্ষণে আমি যা করব তা চারটি বাক্যে লেখা হলো-
১.
ব্যবহারের পর বৈদ্যুতিক বাতি এবং যন্ত্রপাতিসমূহ বন্ধ রাখব।
২.
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ফ্রিজের দরজা খোলা রাখব না।
৩. বাড়িতে
ছায়ার ব্যবস্থার জন্য গাছ লাগাব।
৪. বাতি না
জ্বালিয়ে পর্দা সরিয়ে দিনের আলো ব্যবহার করব।
কোন মন্তব্য নেই